Saturday, September 11, 2010

ইচ্ছামতীঃ ছোটদের একটা বাংলা ওয়েব ম্যাগাজিন

ইচ্ছামতী - ছোটদের জন্য একটা বাংলা ওয়েব ম্যাগাজিন। একটা ছড়া পাঠিয়েছিলাম ইচ্ছামতীর দপ্তরে। ছড়াটা প্রকাশ পেয়েছিল ইচ্ছামতীর এই ২০১০ এর গ্রীষ্ম সংখ্যায়। ছড়াটা পড়া যাবে এখানে - "হরেক ডাক"

Sunday, February 14, 2010

কত কথা বলার ছিল (KATO KATHA BOLAR CHILO)

কত কথা বলার ছিল
হাতে কাগজ উঠেছিল,
কিন্তু শুধুই  হিজিবিজি কাটা
অক্ষর, স্তবক কিছুই হল না।


কত কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা নেই জেনেও
সারা পথে খোঁজ করে গেছি তার,
এ যেন কোন এক ঘোরে পড়ে
মায়ামৃগের পেছনে ছোটা!


সবাই তো ঝেড়ে ফেলে
মান-অভিমান, হতাশা-বেদনা
ঠিক সী-বীচে গড়াগড়ি খেয়ে
বালি ঝেড়ে ফেলার মতন!
কিন্তু চট্‌চটে এঁটেল মাটির মতন
ওদের কিছুতেই আমি ফেলতে পারিনি,
যেন খুব ভারী বোঝা হয়ে গেছি
নদীর নিম্নগতির মতন!


তবুতো মোহনাতে নদীর পরিণতি
উচ্ছল খরস্রোতের শেষে, কিন্তু আমি তো
সবে মধ্যপথে দাঁড় বাইছি
মোহনা সেই কোন্‌  সুদূরে।


যাক্‌ দুঃখ করিনা কোন
দোষ দেওয়ার পক্ষপাতী নই
তাই একাই ভেলা ভাসাই আমি!
_________________

* নয়ালাপ, ডিসেম্বর - ১৯৯৩

Sunday, February 07, 2010

আহ্বান (AOHAN)

সূর্য ওঠার আগে
সবার জাগার আগে
বেড়িয়ে পড়্‌ রে ভাই
মোদের শঙ্কা কোন নাই
এগিয়ে চল্‌ রে ভাই।


চলব মোরা সকল বাঁধন টুটে
দুর্জয়-পদে মোদের লক্ষ্যে ছুটে
খরস্রোতা নদীর মত মোরা
পড়ব উপল ফেটে
পিছিয়ে পড়া নাই
এগিয়ে চল্‌ রে ভাই।


মোরা ছুটব সেদিক পানে
প্রবল পদে ভীমগর্জনে
যেথা অত্যাচারীর অত্যাচার
ভুবন করে ছারখার


সেথায় মোরা নিঠুর হাতে
অত্যাচারীর খড়গ টুটে
এগিয়ে চলব ভাই
মোদের নিশীথ স্বপন তাই
সফল হবে হবেই ভাই।
__________________

* নয়ালাপ, ২৩শে জানুয়ারী, ১৯৯৪।

Thursday, February 04, 2010

গোঁজামিল [GNOJAMIL]


আমি এক বড় কবি।
মিল দিয়ে আঁকি ছবি।।
এটা পেন-পিক্‌চার
রোগী খায় মিক্সচার।।
লেপমুড়ি দেয় কালু।
ক্ষেতে ওঠে রাঙা আলু।।
আকাশের গায়ে শীত।
শিলনোড়া গায় গীত।।
খেতে মিঠে নিমফল।
পেলে খেলে ফুটবল।।
আলো দেয় লন্ঠন।
জোরে হাঁটা হন্টন।।
দেখ আমি দিই মিল।
আসলেতে গোঁজামিল।।
________ 

* নয়ালাপ, ফেব্রুয়ারী-১৯৯৫।।

Friday, January 22, 2010

টুকরো পদ্য- [১-৩] (TUKRO PADYA- [1-3])

              (১) 

              সুর

বেদনা কান্না আনে
আনন্দও জন্ম দেয় অশ্রুর।
গভীর বেদনা, নিথর আনন্দ
কখনো মূক হয়ে যায়।
প্রকাশের ভাষা লীন হয়ে গেলে
তা জেগে ওঠে সুরের ছোঁওয়ায়।

সুর তো শুধুই চাপ চাপ জমা কান্না
কিংবা গলে যাওয়া আনন্দরাশি !
            ______________




                           (২)


                       কবিতা


আখর থেকে কথা
কথাগুলো দলা পাকিয়ে
এক অশরীরী কায়া
সব শুধু মায়াময়, মোহময়
শূন্যে জটিলতা !


ভাষার কোন্‌  গভীর  অতল থেকে
বুদ্‌বুদ্‌ জাগে -
ট্যাঁ-শিশু জন্ম নেয় কবিতা ।
       __________________

              (৩)
        প্রতিদান


বন্ধু ভেবে ভালবেসে
দিয়ে গেল যে ম্লান হেসে
              অযাচিত দান।
তারেই তুমি করলে শেষে
অজ্ঞাতেরই ছদ্মবেশে
             বহু অপমান ।।
     ____________




Wednesday, January 20, 2010

অন্ধকার নেমে এলে (ANDHAKAR NEME ELE)

অন্ধকার নেমে এলে পরে
দিগন্তে তবুও প্রাণের সাড়া,
চাঁদ-জ্যোৎস্না ক্লান্তি দেয় ধুয়ে
নেমে আসে প্রগাঢ় শান্তি।
বুড়ো বাবলাগাছের কোলে শুয়ে
হা হা ক্ষেত, দূর থেকে
আল দেয় হাতছানি।
অমল জ্যোৎস্নামাখা কাজল কালো চোখে
কী ছিল ইশারা কি জানি !
দুটো রঙীন পাখি উড়ে যায় মেঠো সুরে - 
সা - রে - গা - মা - পা - ধা - নি ... ...
ধূপছায়া রঙ আঁচলের শাড়ি
কোন এক নাম না জানা সুগন্ধ
বিবশ তনুমন, - সচকিত চাহনি
সব কিছু জড়িয়ে থাকে শুধু
মায়াময় প্রান্তর - মায়াময় হাসি !
 _____________________

Sunday, January 17, 2010

টাপুর-টুপুর বৃষ্টি ঝরে (TAPUR TUPUR BRISHTI JHORE)

টাপুর-টুপুর বৃষ্টি ঝরে -
ছাতের 'পরে।

জলের বুকে কাঁপন ধরায়
গাছের পাতায় পরশ জাগায়
এমন ছবি নাইতো হেথা,
এযে শহর কোলকাতা !

হেথা নাইতো কোন সোঁদামাটির  ঘ্রাণ
আনন্দেতে গেয়ে ওঠা ছোট্ট পাখির গান।
জানলা দিয়ে দেখি – বৃষ্টি ঝরে,
দূরে-কাছে – সকল ছাতের 'পরে !

উতলা মন ঘোচাতে চায় বদ্ধ খাঁচার বাধা,
এ শহর এক মস্ত গোলকধাঁধা।

হরেক রকম কাজের পাকে বাঁধে,
ছাড়াতে না’রে – এ পরাণ তাই কাঁদে।
মনই তখন চলে উড়ে -
দু-রে  ব-হু-দূ-রে !

যেথায় মনে হরষ জাগে -
যেথার বায়ু পরাণ মাগে,
সেথাই আমি চলব ছুটে
সকল পথের বাঁধন টুটে।
  ________________

Tuesday, January 12, 2010

মিছিল (MICHHIL)

হঠাৎ রুদ্ধ হল চলার গতি
ট্রাফিক সিগ্‌ন্যাল নয়, তবু কেন যেন যানজট !
অবশেষে খবর এল – মিছিল চলেছে ।
হয়তো হবে কোন পার্টির সমাবেশ,
চলবে বক্তৃতা – গলা ফাটানো চিৎকার !
তেমন বাগ্মী এখন খুব কম, এখন অনেক বক্তব্য
থাকে চিরকুটে ভরা ।

এ মিছিলে পাওয়া যাবে দেশের
প্রত্যন্ত প্রদেশের জনকেও ।
হৃদয়ে যাদের আনন্দের অভিব্যাক্তি
এ মহানগরীতে পদার্পণের,
মনে তাদের দুরন্ত আশা
সব কিছু চোখে চেখে দেখার !

গুরু দায়িত্ব কাঁধে তাদের সমাবেশ ভরানোর,
শুধু তারা অজ্ঞাত তাদের আসার কারণ
মূল উদ্দেশ্য যে বিনাব্যয়ে ভ্রমণ !
     ____________

Sunday, January 10, 2010

সাথী (SATHI)

      

  ।। সাথী ।।



আমি           চিনি না তোমায়
কভু            দেখিনি তোমায়
তবু             কেন মনে হয়
                 কত কাল ধরে চেনা।
তব             শুনিনি কন্ঠস্বর
বা              কি বলে ও অধর
আর            কোথা বা তব ঘর
                 নাহি কিছু মোর জানা।।
এই             পথেতে হল দেখা
তবু             চলি যে মোরা একা
হল             মনে মনে কত লেখা
                 মনে মনে তাহা পড়া।
তবু             পাইনা তব সাড়া
কেন           দিইনা তবু সাড়া
কেন           দিয়েও এ মন ধরা
                 নাহি দিতে চায় ধরা।।
          ___________



Thursday, January 07, 2010

ব্যাঘ্র সংহার (চতুর্থ ও শেষ কিস্তি) [BYAGHRO SONHAR-IV & LAST]

তৃতীয় কিস্তির পর থেকে .........................

"
**********


     যখন ঘুম ভাঙল, দেখি ভোরের আলো ফুটেছে। চারিদিকে থিক্‌ থিক্‌ করছে গ্রামের লোক। মাচান থেকে নামতেই একগাদা প্রশ্নবাণ।

    চোখ দুটো কচলে নিয়ে দেখি, আমার লাঠিটা কিছু দূরে দু'টুকরো হয়ে পড়ে রয়েছে। খুব সম্ভবতঃ বাঘের মাথায় ধাক্কা খেয়ে লাঠিটার ঐ অবস্থা। আর গাছের ঠিক গোড়াতেই বাঘ বেচারা চিরনিদ্রায় শায়িত। গলার কাছটা পুড়ে কালো হয়ে গেছে।
   
     গ্রামের এক মাতব্বর সিধু কাকা, ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, - আচ্ছা ভাই, শুনেছি বাঘের শ্রবণেন্দ্রিয়  খুব তীক্ষ্ণ, স্টোভের ঘ্যাড়-ঘেড়ে আওয়াজ বাঘের কানে গেল না কেন?

     গম্ভীর মুখে বিশু বলল, - কানে ঠিকই ঢুকেছে, তবে মাংসটা রমজান মিঞার রেওয়াজি খাসির মাংস কিনা, তাই ওসব ছেঁদো আওয়াজকে বাঘমামা পাত্তাই দেয়নি।

     এখনো ছোটরা যখন গল্প শুনতে বায়না ধরে, বিশুর ঐ বাঘ শিকারের গল্পটা ওদের শোনাই। ওরা হাসি হাসি মুখে বলে, - কাকু, তুমি আচ্ছা একটা গুল দিলে বটে!

     আচ্ছা তোমরাই বলো, গুলও কি কখনো সখনো গল্প হতে পারে না?

***** সমাপ্ত *****

Tuesday, January 05, 2010

ব্যাঘ্র সংহার (তৃতীয় কিস্তি) [BYAGHRO SONHAR-III]

দ্বিতীয় কিস্তির পর থেকে .........................

"
     বিশুর কাণ্ডটা কি ? মাথা-টাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি ! বাঘ মারতে যাচ্ছে, অথচ সঙ্গে নিয়েছে কি? - একটা স্টোভ, দেশলাই, টর্চ, চিমটে আর একটা ছোট ব্যাগ। ব্যাগটাও ফুলে আছে। ভেতরে কি আছে, কে জানে? যেন ঘর-সংসার পাততে যাচ্ছে। তাও যদি বুঝতাম চা খাওয়ার বন্দোবস্ত এগুলো, না হয় একটা কথা ছিল। কিন্তু সেখানে চিমটে দিয়ে কি হবে? বাঘের গায়ে চিমটি কাটবে নাকি! তারপর ঐ ছোট ব্যাগটা? পনেরো-কুড়ি খানার বেশি ঢিল কক্ষণো নেওয়া যাবেনা ওতে। নিয়মরক্ষা বলতে সঙ্গে নিয়েছে মোটে একটা লাঠি। তাও যা সাইজ বাঘ আস্তই হজম করে ফেলবে।
     আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না। বিশুকে বললাম, - এসব কি হচ্ছে?
     কোন্‌ সব? - নির্বিকার গলায় বিশুর পাল্টা প্রশ্ন।
  -  এগুলো দিয়ে তুই বাঘ মারবি? এই লাঠিটার কতটুকু জোর? ..... আর ঐসব দিয়ে ..... বনে ঘর-সংসার পাতবি নাকি?
  -   ঘর-সংসার নয় রে, মিতালি পাতাব। বাঘের সঙ্গে মিতালি।
     কথার কি ছিরি দেখ! বলে কিনা বাঘের সঙ্গে মিতালি পাতাবে! বাঘ কি ওর পাড়ার নতুন ভাড়াটে?
      জানি না বাপু, কি যে কপালে আছে কে জানে! আমি আর কি করবো - তাড়াতাড়ি জোগাড় করে ফেললাম একটা মোটা লাঠি, আর এক ব্যাগ ঢিল। এছাড়া আর কিছুই পেলাম না চোখের সামনে।

* * * * * * * * * *

         কোমরে ব্যাথা হয়ে গেল মাচানে বসে থাকতে থাকতে। সেই কখন এসেছি, এখনো বাঘমামার কোনো পাত্তা নেই। আমাদের আসার সংবাদ শুনেই গা-ঢাকা দিয়েছে নাকি?
      আবছা অন্ধকারে চারদিকের সবকিছু পরিস্কার বুঝতে পারছি। সামনের নদীতে কত পশুই না আসছে আর যাচ্ছে।
     ওদিকে বিশু নিজের কাজ শুরু করে দিয়েছে। একটু চুপ করে যে দেখব তার কি জো আছে! মশার জ্বালায় প্রাণ ওষ্ঠাগত।
      বিশুকে দেখলাম মাচানের ওপরেই স্টোভ জ্বালছে। সত্যিই ও চা করবে নাকি! অবশ্য একটু-একটু চা তেষ্টা আমারও পেয়েছে। ঝিমুনি ভাবটা কাটাতে ওটা দরকারও।
      কিন্তু ওটা আবার কি করছে? একটা লোহার টুকরো - হ্যাঁ, লোহার টুকরোই তো মনে হচ্ছে। আগুনে গরম করছে চিমটে দিয়ে ধরে। তাহলে চা হবে না; লোহা গরম হবে! কিন্তু লোহা গরম করে কি করবে?
      কি রে ঘাবড়ে গেছিস? - বিশু জিজ্ঞেস করে।
   -  কেন, ঘাবড়াবো কেন?
   -  এই যে এতক্ষণ হয়ে গেল, একেবারে স্পিক্‌টি নট্‌!
   -  কথা আর কি করে বলব? কথা কি বলতে দিয়েছিস?
   -  ঠিক আছে,এবার কথা বলতে শুরু কর্‌ ।
   -  ওই লোহার টুকরোটা গরম করে কি করবি?
   -  লোহা? ওই লোহা বাঘমশায় খাবে।
      বাঘ গরম লোহা খাবে? - আমার তো চোখ কপালে।
   -  হ্যাঁ, খাবে। ..... কিন্তু ঐ দ্যাখ্‌।
      সামনের দিকে আঙুল তুলে বিশু দেখায়।
      দুটো টর্চের আলো একই দূরত্ব বজায় রেখে ক্রমে এদিকেই এগিয়ে আসছে।
      ওটা কিরে? - বিশুকে জিজ্ঞেস করলাম।
      বাঘের চোখ। - বিশুর নির্লিপ্ত গলা।
      বাঘের চোখ! তার মানে বাঘটা আমাদের দিকেই এগিয়ে আসছে? আঁৎকে উঠলাম। আমার বুকের ধুক্‌পুক্‌ শব্দ পরিস্কার শুনতে পাচ্ছি। গা দিয়েগঘাম বেরোতে শুরু করেছে। পাশে রাখা লাঠিটাই আমার একমাত্র সম্বল।
      বাঘটা আরো এগিয়ে আসছে। আমি বাঘের চোখ-জোড়া লক্ষ্য করে লাঠিটা ছুঁড়েই আতঙ্কে চোখ বুজলাম।
      উঃ, কী ভয়ঙ্কর চিৎকার।
      কিছুক্ষণ পর শব্দ থামতে আস্তে আস্তে চোখ খুললাম। ম্লান আলোতে দেখি বিশু ছোট্ট ব্যাগটা থেকে টুকরো টুকরো কী জিনিস নীচে ফেলছে। আর মাচানের ঠিক নীচে তা একেবারে বাঘের মুখে গিয়ে পড়ছে। আর শ্রীমান বাঘও পরম আনন্দে গপাগপ্‌ করে তা গলাধঃকরণ করে চলেছে।
      বিশুকে জিজ্ঞেস করায় বলল - মাংসের টুকরো।
      ওদিকে অন্য হাতে চিমটে দিয়ে ধরা লোহাটা স্টোভের আঁচে গরম লাল হয়ে উঠছে।
      একসময় হঠাৎ আগের মতই মাংস ফেলার বদলে লোহার টুকরোটা নীচে ফেলে দিল। আর সঙ্গে সঙ্গেই তা ঢুকে গেল বাঘের মুখের মধ্যে।
       তারপর সে কী আকাশ-ফাটানো রক্ত জল করা চীৎকার! মাথা ঘুরে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে যাই আর কী!
                                                                     ............ ক্রমশঃ


 

Sunday, January 03, 2010

ব্যাঘ্র সংহার (দ্বিতীয় কিস্তি) [BYAGHRO SONHAR-II]

প্রথম কিস্তির পর থেকে ………


     প্রথম ব্যাঘ্র-দর্শনের সৌভাগ্য হয়েছিল ভজুর। গৃহস্থের গরু চরানোই তার কাজ। গ্রামের শেষে বনের ধারে এক বিরাট পশু-চারণের মাঠ আছে। সেখানেই সে গরু চরায়। সেদিনও সে রোজকার মত গরু চরাতে গিয়েছিল। মাঠের ধারে বিরাট এক ছাতিম গাছের তলায় গামছা বিছিয়ে শুয়েছিল সে। আশেপাশেই গরুগুলো চরছিল। হঠাৎই যেন কোন এক মন্ত্রবলে গরুর দল ছত্রভঙ্গ হয়ে ছুটে পালাতে লাগল। ধড়মড়িয়ে উঠেই ভজু দেখতে পেল, একটা গরুর পিঠের উপর বসে আছে বিরাট একটা বাঘ।

     সাধারণতঃ জঙ্গল থেকে এদিকে কোন  বাঘ আসে না। তবে মাঝে মাঝে দলছুট হয়ে দু-একটা এসে পড়ে। তাই ভজু প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও পরক্ষণেই 'বাঘ' 'বাঘ' বলে রাম-ছুট লাগাল। আর খবরটাও ছড়িয়ে পড়ল ঝড়ের বেগে।

     বিশু আমার কাছ থেকেই খবরটা শুনল।
     কিন্তু এরকম ভাবেই বা আর ক'দিন চলে? কাঁহাতক আর সহ্য করা যায় এই অনাহুত বাঘের উপদ্রব। তাই সমস্যার সমাধান করতে সেদিন দুপুরে বোসেদের বাড়ির ছাদে একটা সভা বসল।
     গ্রামের প্রায় প্রত্যেকেই এই সভায় উপস্থিত। আমি ও আমার 'অভিন্ন হৃদয় বিশু' বাদ যাইনি।
     কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার, কেউইকোনরকম দায়িত্ব নিতে চায় না। গ্রামের মধ্যে সবসময় বীরপনা দেখাতে অভ্যস্ত যেসব ছেলে ছোকরারা, তাদের সাহসও যেন কর্পূরের মত উবে গেছে।
     সবারই এক যুক্তি - খালি হাতে কি বাঘ মারা যায়? গ্রামের কারুর কাছে একটা বন্দুক-টন্দুক থাকলেও না হয় কথা ছিল।
     বন্দুক একটা ছিল অবশ্য ঋত্বিকদের, কিন্তু তারা গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকেই গ্রাম 'নেই মামা' হয়ে পড়েছে। 
     শেষ পর্যন্ত হঠাৎ সবাইকে  অবাক করে দিয়ে বিশু বলে উঠল - আমি যাব।
     আমি হতবাক। ও যাবে? বলে কি! ওর কাছেও তো কোন অস্ত্র নেই। তাছাড়া ও এখানে এসেছে বেড়াতে। 
     সবাই সমস্বরে বলে উঠল, - তুমি যাবে?
     বিশু ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায়।
     এর পরেই শুরু হল প্রশ্নবাণ, 'তুমি গিয়ে কি করবে?' 'কি নিয়ে যাবে!' 'বন্দুক আছে?' ইত্যাদি ইত্যাদি।
     যাই হোক, অনেক নিষেধাজ্ঞার পরেও বিশু যখন নাছোড়বান্দা, তখন ওর যাওয়াই ঠিক হল। আর আমিও ঠিক করলুম, সব সময় ওর সঙ্গে সঙ্গে থাকব। 'অভিন্ন হৃদয়' বলে কথা!
     পরের দিন রাতেই আমাদের অভিযানের ব্যবস্থা পাকা হল।
     দুপুরের দিকে লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গলের মধ্যে একটা বিরাট গাছের ওপর মাচা বেঁধে এলাম। জায়গাটা বাঘ শিকারের মাচান বাঁধার পক্ষে উপযুক্ত। কারণ পাশেই এক ক্ষীণস্রোতা নদী বয়ে যাচ্ছে। এরকম নদীতেই রাতের অন্ধকারে পশুপাখি জল খেতে আসে।
     কিন্তু বিকালে শিকারে বেরোবার সময় আমার তো চক্ষু চড়কগাছ।  শুধু  আমার কেন, যে দেখবে তারই হবে। বাঘ মারতে নয়, আমরা যেন  মাছ  ধরতে যাচ্ছি !   
............. ক্রমশঃ





Friday, January 01, 2010

শুভ নববর্ষ : ২০১০ (HAPPY NEW YEAR: 2010)

zwani.com myspace graphic comments
শুভ নববর্ষ

ব্যাঘ্র সংহার [BYAGHRO SONHAR]:

এটা একটা ছোটগল্প। গল্পটা প্রকাশ পেয়েছিল “কিশোর ভারতী”তে, ১৯৯১-এর ডিসেম্বরে। কিশোর ভারতী কলকাতা থেকে প্রকাশিত। এবার গল্পটা বলিঃ

তখন আমি ইংরাজীতে অনার্স নিয়ে স্কটিশে পড়ি। মেসে থাকি। ফার্স্ট ইয়ারের পরীক্ষা সবেমাত্র শেষ হয়েছে। হাতে আলসেমি করার মত বেশ খানিকটা সময়। তাই ঠিক করলাম কিছু দিনের জন্য গ্রামের বাড়িতে ঘুরে আসি।
মনোজও আমার সঙ্গে যাবে বলল। ও-ও এবার ফার্স্ট ইয়ারে আমার সঙ্গে পরীক্ষা দিয়েছে। ওঃ,বলাই হয়নি। মনোজের ডাকনাম ‘বিশু’। ও আর আমি একই মেসে থাকি।
আমি রাজি হয়ে গেলাম বিশুর কথায়। শুধু রাজি হলাম বললে ভুল বলা হবে, বরং বলা উচিত দারুণ খুশিই হলাম। কারণ অভিন্ন-হৃদয় বন্ধু বলতে যা বোঝায় – আমরা তাই। একই সঙ্গে ‘লাইট হাউসে’ সিনেমা দেখি, ‘আমিনাতে’ গিয়ে একটা বিরিয়ানি দু’জনে মিলে ভাগ করে খাই।
বিশু বলল, – আমাদের বাড়ির সবাই এখন দিল্লীতে, ফাঁকা বাড়িতে গিয়ে কি করব? চল্, তোর ওখানে ঘুরে আসি।
ওদের বাড়িতেও আমি একবার গিয়েছিলাম। চম্পাহাটিতে ওদের খুব সুন্দর একটা বাগান বাড়ি আছে। বিশুর মাকেও খুব ভাল লেগেছিল।
যাই হোক্, আমাদের দুজনের যাওয়ার সংবাদ দিয়ে মাকে জরুরী টেলিগ্রাম করে দিলাম। আর তার পরদিনই হাওড়া স্টেশন থেকে চেপে বসলাম ট্রেনে।
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমে, বাসে করে ঘন্টা দুয়েক গেলে আমাদের গ্রাম। বাড়তি লাভ মাইল সাতেকের মধ্যেই জলদাপাড়া জঙ্গল।
বিশু কলকাতার বাইরে একটু আধটু গেলেও এসব দিকে বড় একটা আসেনি। স্বাভাবিক ভাবেই বিশুর মন আর শরীর দুটোই উত্তর বাংলার এই অজ পাড়াগাঁয়ের গলি-ঘুঁজিতে ভেসে বেড়াতে লাগল।
আমারও সেই রকমই হওয়া উচিত ছিল। কারণ আমিও দেশের বাড়িতে অনেকদিন পরেই পা দিচ্ছি, কিন্তু, বিশুকে নিয়ে গ্রামে এক চক্কর দেওয়ার পরই মনে একটা কিরকম খটকা লেগে গেল। গ্রামের অধিকাংশ মানুষেরই কিরকম ম্লান মুখ। চারদিকে কিরকম একটা থমথমে ভাব। সবাই যেন রুদ্ধশ্বাসে  একটা ভয়ঙ্কর কিছুর প্রতীক্ষায় রয়েছে।
বিশুও লক্ষ্য করেছে ব্যাপারটা ! খুব চালাক ছেলে, ওরও নজর এড়ায়নি। সকালে চা জলখাবার খাওয়ার পর আমাকে বলল, – সন্ধ্যে হলেই সবাই দরজায় খিল এঁটে দেয় কেন রে?
হুঁ,  ঠিকই ধরেছিস। – ওর গোয়েন্দাসুলভ পর্যবেক্ষণকে মনে মনে তারিফ জানালাম : আমাদের গ্রামে তো চোর-ডাকাতের কোনোদিন কোন উপদ্রব নেই, রাত ন’টা দশটা পর্যন্ত সদর দরজা খুলে রেখে রাস্তায় লোক চলাচল করে। সবসময় দেখেছি বটতলায় চায়ের দোকানটাতে সন্ধ্যেবেলায় লোক গমগম করছে। এবারই যেন কেমন খাপছাড়া ভাব। ব্যাপারটা মোটেই সুবিধের মনে হচ্ছে না।

দুপুরের দিকে খবরটা জানতে পারলাম ! মায়ের মুখেই শুনলাম, সম্প্রতি আমাদের গ্রামে বাঘের উপদ্রব হয়েছে। ইতিমধ্যে দু-একটা গরু, ছাগলও লোপাট হয়েছে। .........
                                               …………………ক্রমশঃ