Friday, January 01, 2010

ব্যাঘ্র সংহার [BYAGHRO SONHAR]:

এটা একটা ছোটগল্প। গল্পটা প্রকাশ পেয়েছিল “কিশোর ভারতী”তে, ১৯৯১-এর ডিসেম্বরে। কিশোর ভারতী কলকাতা থেকে প্রকাশিত। এবার গল্পটা বলিঃ

তখন আমি ইংরাজীতে অনার্স নিয়ে স্কটিশে পড়ি। মেসে থাকি। ফার্স্ট ইয়ারের পরীক্ষা সবেমাত্র শেষ হয়েছে। হাতে আলসেমি করার মত বেশ খানিকটা সময়। তাই ঠিক করলাম কিছু দিনের জন্য গ্রামের বাড়িতে ঘুরে আসি।
মনোজও আমার সঙ্গে যাবে বলল। ও-ও এবার ফার্স্ট ইয়ারে আমার সঙ্গে পরীক্ষা দিয়েছে। ওঃ,বলাই হয়নি। মনোজের ডাকনাম ‘বিশু’। ও আর আমি একই মেসে থাকি।
আমি রাজি হয়ে গেলাম বিশুর কথায়। শুধু রাজি হলাম বললে ভুল বলা হবে, বরং বলা উচিত দারুণ খুশিই হলাম। কারণ অভিন্ন-হৃদয় বন্ধু বলতে যা বোঝায় – আমরা তাই। একই সঙ্গে ‘লাইট হাউসে’ সিনেমা দেখি, ‘আমিনাতে’ গিয়ে একটা বিরিয়ানি দু’জনে মিলে ভাগ করে খাই।
বিশু বলল, – আমাদের বাড়ির সবাই এখন দিল্লীতে, ফাঁকা বাড়িতে গিয়ে কি করব? চল্, তোর ওখানে ঘুরে আসি।
ওদের বাড়িতেও আমি একবার গিয়েছিলাম। চম্পাহাটিতে ওদের খুব সুন্দর একটা বাগান বাড়ি আছে। বিশুর মাকেও খুব ভাল লেগেছিল।
যাই হোক্, আমাদের দুজনের যাওয়ার সংবাদ দিয়ে মাকে জরুরী টেলিগ্রাম করে দিলাম। আর তার পরদিনই হাওড়া স্টেশন থেকে চেপে বসলাম ট্রেনে।
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমে, বাসে করে ঘন্টা দুয়েক গেলে আমাদের গ্রাম। বাড়তি লাভ মাইল সাতেকের মধ্যেই জলদাপাড়া জঙ্গল।
বিশু কলকাতার বাইরে একটু আধটু গেলেও এসব দিকে বড় একটা আসেনি। স্বাভাবিক ভাবেই বিশুর মন আর শরীর দুটোই উত্তর বাংলার এই অজ পাড়াগাঁয়ের গলি-ঘুঁজিতে ভেসে বেড়াতে লাগল।
আমারও সেই রকমই হওয়া উচিত ছিল। কারণ আমিও দেশের বাড়িতে অনেকদিন পরেই পা দিচ্ছি, কিন্তু, বিশুকে নিয়ে গ্রামে এক চক্কর দেওয়ার পরই মনে একটা কিরকম খটকা লেগে গেল। গ্রামের অধিকাংশ মানুষেরই কিরকম ম্লান মুখ। চারদিকে কিরকম একটা থমথমে ভাব। সবাই যেন রুদ্ধশ্বাসে  একটা ভয়ঙ্কর কিছুর প্রতীক্ষায় রয়েছে।
বিশুও লক্ষ্য করেছে ব্যাপারটা ! খুব চালাক ছেলে, ওরও নজর এড়ায়নি। সকালে চা জলখাবার খাওয়ার পর আমাকে বলল, – সন্ধ্যে হলেই সবাই দরজায় খিল এঁটে দেয় কেন রে?
হুঁ,  ঠিকই ধরেছিস। – ওর গোয়েন্দাসুলভ পর্যবেক্ষণকে মনে মনে তারিফ জানালাম : আমাদের গ্রামে তো চোর-ডাকাতের কোনোদিন কোন উপদ্রব নেই, রাত ন’টা দশটা পর্যন্ত সদর দরজা খুলে রেখে রাস্তায় লোক চলাচল করে। সবসময় দেখেছি বটতলায় চায়ের দোকানটাতে সন্ধ্যেবেলায় লোক গমগম করছে। এবারই যেন কেমন খাপছাড়া ভাব। ব্যাপারটা মোটেই সুবিধের মনে হচ্ছে না।

দুপুরের দিকে খবরটা জানতে পারলাম ! মায়ের মুখেই শুনলাম, সম্প্রতি আমাদের গ্রামে বাঘের উপদ্রব হয়েছে। ইতিমধ্যে দু-একটা গরু, ছাগলও লোপাট হয়েছে। .........
                                               …………………ক্রমশঃ

No comments:

Post a Comment

FORGET PLEASE NOT TO PLACE YOUR VALUABLE COMMENTS: