Sunday, January 03, 2010

ব্যাঘ্র সংহার (দ্বিতীয় কিস্তি) [BYAGHRO SONHAR-II]

প্রথম কিস্তির পর থেকে ………


     প্রথম ব্যাঘ্র-দর্শনের সৌভাগ্য হয়েছিল ভজুর। গৃহস্থের গরু চরানোই তার কাজ। গ্রামের শেষে বনের ধারে এক বিরাট পশু-চারণের মাঠ আছে। সেখানেই সে গরু চরায়। সেদিনও সে রোজকার মত গরু চরাতে গিয়েছিল। মাঠের ধারে বিরাট এক ছাতিম গাছের তলায় গামছা বিছিয়ে শুয়েছিল সে। আশেপাশেই গরুগুলো চরছিল। হঠাৎই যেন কোন এক মন্ত্রবলে গরুর দল ছত্রভঙ্গ হয়ে ছুটে পালাতে লাগল। ধড়মড়িয়ে উঠেই ভজু দেখতে পেল, একটা গরুর পিঠের উপর বসে আছে বিরাট একটা বাঘ।

     সাধারণতঃ জঙ্গল থেকে এদিকে কোন  বাঘ আসে না। তবে মাঝে মাঝে দলছুট হয়ে দু-একটা এসে পড়ে। তাই ভজু প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও পরক্ষণেই 'বাঘ' 'বাঘ' বলে রাম-ছুট লাগাল। আর খবরটাও ছড়িয়ে পড়ল ঝড়ের বেগে।

     বিশু আমার কাছ থেকেই খবরটা শুনল।
     কিন্তু এরকম ভাবেই বা আর ক'দিন চলে? কাঁহাতক আর সহ্য করা যায় এই অনাহুত বাঘের উপদ্রব। তাই সমস্যার সমাধান করতে সেদিন দুপুরে বোসেদের বাড়ির ছাদে একটা সভা বসল।
     গ্রামের প্রায় প্রত্যেকেই এই সভায় উপস্থিত। আমি ও আমার 'অভিন্ন হৃদয় বিশু' বাদ যাইনি।
     কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার, কেউইকোনরকম দায়িত্ব নিতে চায় না। গ্রামের মধ্যে সবসময় বীরপনা দেখাতে অভ্যস্ত যেসব ছেলে ছোকরারা, তাদের সাহসও যেন কর্পূরের মত উবে গেছে।
     সবারই এক যুক্তি - খালি হাতে কি বাঘ মারা যায়? গ্রামের কারুর কাছে একটা বন্দুক-টন্দুক থাকলেও না হয় কথা ছিল।
     বন্দুক একটা ছিল অবশ্য ঋত্বিকদের, কিন্তু তারা গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকেই গ্রাম 'নেই মামা' হয়ে পড়েছে। 
     শেষ পর্যন্ত হঠাৎ সবাইকে  অবাক করে দিয়ে বিশু বলে উঠল - আমি যাব।
     আমি হতবাক। ও যাবে? বলে কি! ওর কাছেও তো কোন অস্ত্র নেই। তাছাড়া ও এখানে এসেছে বেড়াতে। 
     সবাই সমস্বরে বলে উঠল, - তুমি যাবে?
     বিশু ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায়।
     এর পরেই শুরু হল প্রশ্নবাণ, 'তুমি গিয়ে কি করবে?' 'কি নিয়ে যাবে!' 'বন্দুক আছে?' ইত্যাদি ইত্যাদি।
     যাই হোক, অনেক নিষেধাজ্ঞার পরেও বিশু যখন নাছোড়বান্দা, তখন ওর যাওয়াই ঠিক হল। আর আমিও ঠিক করলুম, সব সময় ওর সঙ্গে সঙ্গে থাকব। 'অভিন্ন হৃদয়' বলে কথা!
     পরের দিন রাতেই আমাদের অভিযানের ব্যবস্থা পাকা হল।
     দুপুরের দিকে লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গলের মধ্যে একটা বিরাট গাছের ওপর মাচা বেঁধে এলাম। জায়গাটা বাঘ শিকারের মাচান বাঁধার পক্ষে উপযুক্ত। কারণ পাশেই এক ক্ষীণস্রোতা নদী বয়ে যাচ্ছে। এরকম নদীতেই রাতের অন্ধকারে পশুপাখি জল খেতে আসে।
     কিন্তু বিকালে শিকারে বেরোবার সময় আমার তো চক্ষু চড়কগাছ।  শুধু  আমার কেন, যে দেখবে তারই হবে। বাঘ মারতে নয়, আমরা যেন  মাছ  ধরতে যাচ্ছি !   
............. ক্রমশঃ





No comments:

Post a Comment

FORGET PLEASE NOT TO PLACE YOUR VALUABLE COMMENTS: