Tuesday, January 05, 2010

ব্যাঘ্র সংহার (তৃতীয় কিস্তি) [BYAGHRO SONHAR-III]

দ্বিতীয় কিস্তির পর থেকে .........................

"
     বিশুর কাণ্ডটা কি ? মাথা-টাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি ! বাঘ মারতে যাচ্ছে, অথচ সঙ্গে নিয়েছে কি? - একটা স্টোভ, দেশলাই, টর্চ, চিমটে আর একটা ছোট ব্যাগ। ব্যাগটাও ফুলে আছে। ভেতরে কি আছে, কে জানে? যেন ঘর-সংসার পাততে যাচ্ছে। তাও যদি বুঝতাম চা খাওয়ার বন্দোবস্ত এগুলো, না হয় একটা কথা ছিল। কিন্তু সেখানে চিমটে দিয়ে কি হবে? বাঘের গায়ে চিমটি কাটবে নাকি! তারপর ঐ ছোট ব্যাগটা? পনেরো-কুড়ি খানার বেশি ঢিল কক্ষণো নেওয়া যাবেনা ওতে। নিয়মরক্ষা বলতে সঙ্গে নিয়েছে মোটে একটা লাঠি। তাও যা সাইজ বাঘ আস্তই হজম করে ফেলবে।
     আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না। বিশুকে বললাম, - এসব কি হচ্ছে?
     কোন্‌ সব? - নির্বিকার গলায় বিশুর পাল্টা প্রশ্ন।
  -  এগুলো দিয়ে তুই বাঘ মারবি? এই লাঠিটার কতটুকু জোর? ..... আর ঐসব দিয়ে ..... বনে ঘর-সংসার পাতবি নাকি?
  -   ঘর-সংসার নয় রে, মিতালি পাতাব। বাঘের সঙ্গে মিতালি।
     কথার কি ছিরি দেখ! বলে কিনা বাঘের সঙ্গে মিতালি পাতাবে! বাঘ কি ওর পাড়ার নতুন ভাড়াটে?
      জানি না বাপু, কি যে কপালে আছে কে জানে! আমি আর কি করবো - তাড়াতাড়ি জোগাড় করে ফেললাম একটা মোটা লাঠি, আর এক ব্যাগ ঢিল। এছাড়া আর কিছুই পেলাম না চোখের সামনে।

* * * * * * * * * *

         কোমরে ব্যাথা হয়ে গেল মাচানে বসে থাকতে থাকতে। সেই কখন এসেছি, এখনো বাঘমামার কোনো পাত্তা নেই। আমাদের আসার সংবাদ শুনেই গা-ঢাকা দিয়েছে নাকি?
      আবছা অন্ধকারে চারদিকের সবকিছু পরিস্কার বুঝতে পারছি। সামনের নদীতে কত পশুই না আসছে আর যাচ্ছে।
     ওদিকে বিশু নিজের কাজ শুরু করে দিয়েছে। একটু চুপ করে যে দেখব তার কি জো আছে! মশার জ্বালায় প্রাণ ওষ্ঠাগত।
      বিশুকে দেখলাম মাচানের ওপরেই স্টোভ জ্বালছে। সত্যিই ও চা করবে নাকি! অবশ্য একটু-একটু চা তেষ্টা আমারও পেয়েছে। ঝিমুনি ভাবটা কাটাতে ওটা দরকারও।
      কিন্তু ওটা আবার কি করছে? একটা লোহার টুকরো - হ্যাঁ, লোহার টুকরোই তো মনে হচ্ছে। আগুনে গরম করছে চিমটে দিয়ে ধরে। তাহলে চা হবে না; লোহা গরম হবে! কিন্তু লোহা গরম করে কি করবে?
      কি রে ঘাবড়ে গেছিস? - বিশু জিজ্ঞেস করে।
   -  কেন, ঘাবড়াবো কেন?
   -  এই যে এতক্ষণ হয়ে গেল, একেবারে স্পিক্‌টি নট্‌!
   -  কথা আর কি করে বলব? কথা কি বলতে দিয়েছিস?
   -  ঠিক আছে,এবার কথা বলতে শুরু কর্‌ ।
   -  ওই লোহার টুকরোটা গরম করে কি করবি?
   -  লোহা? ওই লোহা বাঘমশায় খাবে।
      বাঘ গরম লোহা খাবে? - আমার তো চোখ কপালে।
   -  হ্যাঁ, খাবে। ..... কিন্তু ঐ দ্যাখ্‌।
      সামনের দিকে আঙুল তুলে বিশু দেখায়।
      দুটো টর্চের আলো একই দূরত্ব বজায় রেখে ক্রমে এদিকেই এগিয়ে আসছে।
      ওটা কিরে? - বিশুকে জিজ্ঞেস করলাম।
      বাঘের চোখ। - বিশুর নির্লিপ্ত গলা।
      বাঘের চোখ! তার মানে বাঘটা আমাদের দিকেই এগিয়ে আসছে? আঁৎকে উঠলাম। আমার বুকের ধুক্‌পুক্‌ শব্দ পরিস্কার শুনতে পাচ্ছি। গা দিয়েগঘাম বেরোতে শুরু করেছে। পাশে রাখা লাঠিটাই আমার একমাত্র সম্বল।
      বাঘটা আরো এগিয়ে আসছে। আমি বাঘের চোখ-জোড়া লক্ষ্য করে লাঠিটা ছুঁড়েই আতঙ্কে চোখ বুজলাম।
      উঃ, কী ভয়ঙ্কর চিৎকার।
      কিছুক্ষণ পর শব্দ থামতে আস্তে আস্তে চোখ খুললাম। ম্লান আলোতে দেখি বিশু ছোট্ট ব্যাগটা থেকে টুকরো টুকরো কী জিনিস নীচে ফেলছে। আর মাচানের ঠিক নীচে তা একেবারে বাঘের মুখে গিয়ে পড়ছে। আর শ্রীমান বাঘও পরম আনন্দে গপাগপ্‌ করে তা গলাধঃকরণ করে চলেছে।
      বিশুকে জিজ্ঞেস করায় বলল - মাংসের টুকরো।
      ওদিকে অন্য হাতে চিমটে দিয়ে ধরা লোহাটা স্টোভের আঁচে গরম লাল হয়ে উঠছে।
      একসময় হঠাৎ আগের মতই মাংস ফেলার বদলে লোহার টুকরোটা নীচে ফেলে দিল। আর সঙ্গে সঙ্গেই তা ঢুকে গেল বাঘের মুখের মধ্যে।
       তারপর সে কী আকাশ-ফাটানো রক্ত জল করা চীৎকার! মাথা ঘুরে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে যাই আর কী!
                                                                     ............ ক্রমশঃ


 

No comments:

Post a Comment

FORGET PLEASE NOT TO PLACE YOUR VALUABLE COMMENTS: